সুনামগঞ্জ , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
দেখার কেউ নেই : মৌলা নদী থেকে অবাধে লুট হচ্ছে বালু ৯ দিনব্যাপী সেবাইত প্রশিক্ষণের উদ্বোধন দেখার হাওরে মাটিখেকোদের থাবা বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সকল অন্যায়ের বিচার করা হবে : ডা. জাহিদ হোসেন ২৯ ডিসেম্বর লন্ডন যাত্রা করবেন খালেদা জিয়া বৈষম্যহীন দেশ গড়তে মেধার মূল্যায়ন করতে হবে হাওরের পানি নিষ্কাশনে ধীরগতি, বিপাকে কৃষক জামালগঞ্জে সারদা সংঘের মঙ্গল শোভাযাত্রা সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের মানববন্ধন সব হাওরে দ্রুত বাঁধের কাজ শুরুর দাবি নিয়ম মেনে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে হবে টাংগুয়ার হাওরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ঢাকাস্থ সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা কমিটি গঠিত তিন বন্ধুর মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না কেউ পুলিশে যেন আর রাজনৈতিক কুপ্রভাবে না পড়ে : সিলেটে আইজিপি সাদপন্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা পোস্টমাস্টার মো. শাহজান স্মরণে আলোচনা সভা সমৃদ্ধ দেশ বিনির্মাণে নতুন প্রজন্মকে সাথে নিয়ে কাজ করবো আমার দেশ ২২ ডিসেম্বর থেকে নবযাত্রা শুরু করবে : মাহমুদুর রহমান পুলিশ সুপারের সীমান্তবর্তী এলাকা পরিদর্শন

হাওরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের ব্যর্থতার দায় প্রশাসনেরই

  • আপলোড সময় : ২৪-১২-২০২৪ ১০:৫৫:৪২ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৪-১২-২০২৪ ১০:৫৮:১৬ পূর্বাহ্ন
হাওরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের ব্যর্থতার দায় প্রশাসনেরই
হাওরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের ব্যর্থতার দায় প্রশাসনেরই একটি খবরে প্রকাশ জামালগঞ্জের পাকনা হাওরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে দ্রুত নালা খননের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। অন্য একটি খবরে প্রকাশ, “জামালগঞ্জে হাওরের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে ধীরগতিতে। এতে বিপাকে রয়েছেন স্থানীয় অনেক কৃষক। জানা যায়, উপজেলার সকল হাওরের পানি সঠিক সময়ে কমে বোরো জমি রোপণ করার প্রায় উপযুক্ত সময় ঘনিয়ে আসলেও বেহেলী ইউনিয়নের ‘বাড়িরনামা’ হাওরের পানি এখনো পুরোপুরি কমেনি। ধীরগতিতে ‘বাড়িরনামা’ হাওরের এই পানি নিষ্কাশনে বিপাকে রয়েছেন কৃষকগণ।” পাকনা হাওরের জলাবদ্ধার বয়ানে বলা হয়েছে, “আনুমানিক ৬৫৫০০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন সক্ষম (আবাদী ১১৫০০ হেক্টর, অনাবাদী ২৯০৪ হেক্টর, মোট ১৪৪৪৮ হেক্টর) বিস্তীর্ণ হাওর সংলগ্ন এলাকার বিশাল জলাভূমির পানি নিষ্কাশনের রাস্তা গজারিয়া স্লুইস গেইট ও ঢালিয়া স্লুইস গেইট পর্যন্ত নালাগুলি (খাল) পলি মাটিতে ভরাট হওয়াতে সময়মতো পানি নিষ্কাশন বিঘিœত হচ্ছে। যার ফলে ধান রোপণের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমপক্ষে ২০/২৫ দিন বিলম্ব হয়, এতে ফসল সময়মতো উঠানো যায় না আগাম বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও হাওরের মধ্যেস্থলে অনেক জায়গায় এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, যেখানে ফসল লাগানো সম্ভব হয়েই উঠেনা। প্রায় ৪০/৪৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ তাদের একমাত্র ফসল সময়মত রোপণ করতে না পারায় এলাকাবাসী মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এমতাবস্থায় পাকনা হাওরের পানি নিষ্কাশনের জন্য গজারিয়া স্লুইস গেইট ও ঢালিয়া স্লুইস গেইট পর্যন্ত খাল খনন করা একান্ত প্রয়োজন। ‘হাওর এলাকায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত, নদী/খাল পুনঃখননের জন্য স্কীম প্রস্তুত ও বাস্তবায়নের লক্ষে কাবিটা নীতিমালা-২০১৭, ‘সংশোধিত কাবিটা নীতিমালা-২০২৩’’-এর অনুচ্ছেদ “৩.৪ স্কীম নির্বাচন জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী/খাল পুনঃখনন এর স্কীম প্রণয়ন” এর আলোকে হাওরবাসীর সমস্যা দূরীকরণার্থে গজারিয়া স্লুইস গেইট ও ঢালিয়া স্লুইস গেইটের নালা খননের প্রকল্প গ্রহণ করা জনস্বার্থে খুবই জরুরি। উল্লেখিত বিষয়টি সুবিবেচনায় নিয়ে ‘হাওরবাসীর সমস্যা সমাধানকল্পে গজারিয়া স্লুইস গেইট ও ঢালিয়া স্লুইস গেইটের নালা খননের প্রকল্প গ্রহণ’ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে আবেদনে।”এই দুই আবেদন-সংবাদের মর্মার্থ বিশ্লেষণে একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে, প্রশাসন হাওরের জলপ্রবাহ জনকল্যাণে নিয়ন্ত্রণে বদ্ধপরিকর। ফসলরক্ষার জন্যে পর্যাপ্ত স্লুইস গেইটসহ বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে হাওরের যত্রতত্র। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে জল না নামার কারণে “ঘাতমতো’ অর্থাৎ সময়মতো ফসল জমিতে লাগানো যাচ্ছে না কিংবা বিলম্ব হচ্ছে এই কারণে আগাম অর্থাৎ অকাল বন্যায় ফসল ক্ষতির আশঙ্কা কমছে না। কোনও একান্ত প্রয়োজনীয় কাজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতেই পারে। হাওরে জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসেনর স্লুইস গেইট ও বাঁধনির্মাণের একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো জলাবদ্ধতার সৃষ্টি। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রতিহতকরণের নির্দিষ্ট কার্যক্রম থাকা উচিত প্রশাসনের পক্ষ থেকে, কিন্তু কার্যত পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, সেটা নেই। কৃষকদেরকে আবির্ভূত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে প্রশাসনকে অবহিত করতে হচ্ছে এবং অবহিতকরণের জবাবে জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমন কুমার সাহা বলছেন, “পানি নিষ্কাশনের ব্যাপারটা ইউএনও মহোদয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড দেখেন। তারপরও আমি ওনাদের সাথে কথা বলে যৌথভাবে সমাধান করার চেষ্টা করবো।” এই ‘দেখেন’ কথাটি অতীব তাৎপর্যপূর্ণ বটে, এই কারণে যে, আসলে যে দেখা হয় না এবং তদবিরের পরে ‘দেখতে দেখতে’ অর্থাৎ ব্যবস্থা নিতে নিতে ফসল লাগানোর ‘ঘাত’ (যথোপযুক্ত সময়) অতিক্রান্ত হয়ে যায় এবং প্রকারান্তরে হাওরে সময়মতো ফসল লাগানোর ব্যর্থতা বাঁধনির্মাণ ও স্লুইস গেইটের উপস্থিতিকে নিরর্থক করে তোলে। এই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তিসঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে, যে- হাওরে ফসলই ফললো না, শূন্য সে-হাওরে বাঁধ ও স্লুইস গেইটের কী প্রয়োজন? তাছাড়া এবংবিধ কার্যক্রমের নিহিতার্থ এই হয়ে উঠে যে, হাওরের ফসল রক্ষার্থের সমগ্র প্রশাসনিক কার্যক্রম হাওরকে ফসলশূন্য প্রান্তরে পরিণত করার কার্যক্রম হয়ে উঠা। এমতাবস্থায় অভিজ্ঞমহলের অভিমত এই যে, কৃষকের আগে প্রশাসনকে এই জলাবদ্ধতা বিষয়ে ভাবনা করা ও এর নিরসনে এগিয়ে আসা উচিত। অন্যথায় বাঁধ ও স্লুইস গেইট নির্মাণের কার্যক্রমকে প্রশাসনই নিরর্থক করে তোলবে। আর এমন হলে এই অকেজো প্রশাসনেরই বা দরকার কী ? যখন প্রকারান্তরে হাওরপ্রকৃতির জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার গোটা কার্যক্রমটি একধরণের কাঠামোগত সহিংসতায় পর্যবসিত হয় এবং প্রকৃতি নিয়ন্ত্রিত না হয়ে কৃষক নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। সুতরাং বোরোক্ষেতে ফসল লাগনোর ‘ঘাত’ অর্থাৎ ঠিকঠাক সময় পেরিয়ে যাওয়ার আগে হাওর থেকে জল নিষ্কাশনের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে। অন্যথায় এই ব্যর্থতার দায় নিতে হবে প্রশাসনকেই।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স